শ্যামনগরে জনতার হাতে ধরা পড়লো দুই বনদস্যু, উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্র


প্রকাশের সময় : জুন ১৭, ২০২৫, ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ
শ্যামনগরে জনতার হাতে ধরা পড়লো দুই বনদস্যু, উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্র

এবিএম কাইয়ুম রাজ, নিজস্ব প্রতিবেদক :

 

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের যতীন্দ্রনগর ও মীরগাং এলাকা থেকে দুই বনদস্যুকে আটক করেছে স্থানীয় জনতা। সোমবার (১৬ জুন) রাতে এই অভিযান চালানো হয়। আটকের সময় একটি আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।

 

আটককৃতরা হলেন—শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের যতীন্দ্রনগর গ্রামের মৃত নওশাদ গাজীর ছেলে নজির গাজী (৫৫) এবং খুলনার কয়রা উপজেলার বৈকারী এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে দিদারুল ইসলাম (৩৮)। তারা দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে বনদস্যুদের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

 

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে ৫ থেকে ৭ জন অপরিচিত ব্যক্তি যতীন্দ্রনগর বাজার এলাকায় প্রবেশ করে। স্থানীয়দের চোখে পড়লে তারা সন্দেহ প্রকাশ করে এবং ঘিরে ফেলে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। অপরিচিতদের উত্তর বিভ্রান্তিকর হওয়ায় স্থানীয়রা তাদের উপর নজর রাখে। একপর্যায়ে পালানোর চেষ্টা করলে দিদারুল ইসলামকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে জনতা। পরে শ্যামনগর থানার পুলিশ এসে তাকে হেফাজতে নেয়।

 

পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় মীরগাং এলাকা থেকে নজির গাজীকেও আটক করা হয়। নজির গাজীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের সহযোগিতায় সন্দেহভাজনদের ব্যবহৃত একটি নৌকায় তল্লাশি চালিয়ে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

 

জিজ্ঞাসাবাদে নজির গাজী স্বীকার করেছেন, তিনি সুন্দরবনের কুখ্যাত ‘জোনাব বাহিনী’র সঙ্গে যুক্ত। বনদস্যুদের লোকালয়ে যাতায়াত, থাকা ও নিরাপদে চলাচলে সহায়তা করা ছিল তার দায়িত্ব। তিনি জানান, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে দুই দস্যুকে যতীন্দ্রনগর বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি চুক্তিবদ্ধ হন।

 

অপরদিকে, দিদারুল ইসলাম পুলিশকে জানায়, সে নজির গাজীর অধীনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত এবং সরাসরি বনদস্যু কার্যক্রমে অংশ নিত। তারা সুন্দরবনের গভীরে মাছ শিকারিদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করত। প্রয়োজনে অস্ত্রেরও ব্যবহার করত।

 

শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে বনদস্যুতার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তারা মাছ শিকারির ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাত। বর্তমানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের পর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালেও, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দুজনকে আটক করায় পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সুন্দরবন ও উপকূল অঞ্চলে বনদস্যু নির্মূলে আরও কঠোর অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।