জমি দখল ও মিথ্যা মামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ৪:৩৩ অপরাহ্ণ
জমি দখল ও মিথ্যা মামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন

হুসাইন বিন আফতাব, নিজস্ব প্রতিবেদক:

আগুন লাগিয়ে ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মিথ্যা মামলায় নয় দিন কারাভোগের পর বুধবার জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন জঙ্গল ভাঙি ও তার ছেলে সাগর ভাঙি, গোপাল মণ্ডল এবং নিত্যানন্দ ভাঙি। তবে স্বত্বদখলীয় জমি থেকে সরে না গেলে নতুন করে মামলায় জড়ানোর ও দেশ ছাড়ার হুমকি পাচ্ছে বলে জঙ্গল ভাঙি ও তার পরিবারের অভিযোগ। এ বিষয়ে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জঙ্গল ভাঙির সঙ্গে পুত্র সাগর ভাঙি, পুত্রবধূ প্রিয়াংকা ভাঙি ও গোপাল মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন।

জঙ্গল ভাঙি অভিযোগ করেন, ১৯৯৪ সালে তার মা পাচি বালা ভাঙির নামে প্রায় ৩ বিঘা সরকারি জমি বন্দোবস্ত হয়। কিন্তু এলাকার ধনাঢ্য তপন গাইন, দিলীপ গাইন ও কমলেশ গাইন ওই জমি দখলে রেখে অপর একটি প্লট থেকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। দীর্ঘদিনেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় গত ১ আগস্ট তিনি শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগ যাচাই শেষে ইউএনও ও এসি ল্যান্ডের নির্দেশে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জমি মাপজোখ করে বন্দোবস্তকৃত জমিতে লাল পতাকা স্থাপন ও দখল বুঝিয়ে দেন। কিন্তু দিলীপ গাইন সময় প্রার্থনা করে ওই জমিতে পাকা ভবন নির্মাণ শুরু করেন। এতে বাধ্য হয়ে গত ১৯ অক্টোবর জঙ্গল ভাঙি ও তার পরিবার নেট দিয়ে নিজেদের জমি ঘিরে দখল নেন।

জঙ্গল ভাঙির দাবি, এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দিলীপ ও সহযোগী রঘুনাথ খাঁ ষড়যন্ত্র করে সেদিন রাত দেড়টার দিকে রান্নাঘরে আগুন লাগিয়ে দেন এবং উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই ঘর পোড়ানোর মামলা করেন।

তিনি আরও জানান, জামিন নিয়ে বাড়ি ফেরার পর থেকে নতুন মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। সাতক্ষীরায় বসবাসকারী রঘুনাথ খাঁ নানাভাবে দিলীপের পক্ষ নিয়ে তাদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুত্রবধূ প্রিয়াংকা ভাঙি লিখিত বক্তব্যে বলেন, “রঘুনাথ খাঁ এই ষড়যন্ত্রের মূল নায়ক। দিলীপ গাইনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তিনি সনাতন ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “দিলীপ-রঘু চক্র আমাদের দেশ ছেড়ে ভারতে পাঠানোর চেষ্টা করছে। আগুন লাগানোর দিন (১৩ অক্টোবর রাত দেড়টা) রঘুনাথ দিলীপের বাড়িতেই ছিলেন। নিজের রান্নাঘরে আগুন দিয়ে জঙ্গল পরিবারকে ফাঁসাতে এই নাটক সাজানো হয়। তিনি অভিযোগ করেন, এর আগে রঘুনাথ পানখালীর প্রমথ মহালদারকেও একইভাবে সর্বনাশ করেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাগর ভাঙি বলেন, “বন্দোবস্তকৃত জমির বাইরে আমাদের কোনো জমি নেই। দিলীপ-রঘু আমাদের শেষ সম্বল জমি থেকে উচ্ছেদে মরিয়া। জামিন নিয়ে বাড়ি ফেরার পরও তারা হুমকি দিচ্ছে—জমি ছেড়ে না দিলে মিথ্যা মামলা ও খুনের ভয় দেখাচ্ছে।” তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে রঘুনাথ খাঁ’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযুক্ত দিলীপ গাইন বলেন, “আমি নিজের ঘরে আগুন দিইনি, বরং জঙ্গলরাই দিয়েছে। রঘুনাথ আমার আত্মীয়, সে সেদিন বেড়াতে এসেছিল।” হুমকি বা দেশ ছাড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, দিলীপ ও জঙ্গলের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে উভয় পক্ষ মামলা করেছে। তদন্ত শেষ হলে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।