
হুসাইন বিন আফতাব, নিজস্ব প্রতিবেদক:
সড়ক দুর্ঘটনায় যুবদলের এক কর্মীর শিশুপুত্র নিহত হওয়ার জেরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চিকিৎসকসহ চারজন আহত হয়েছেন।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. মো. মিলন হোসেন বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে এ হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেলে করে আসা ২৫–৩০ জন যুবক জরুরি বিভাগে ঢুকে সহকারী মেডিকেল অফিসার আবদুল আজিজের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁকে রক্ষার চেষ্টা করলে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ এবং গাড়িচালক নুরুজ্জামানও হামলার শিকার হন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার শ্রীফলকাঠি এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় যুবদল কর্মী রাহিম ইসলামের তিন বছরের ছেলে নিশাত গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গুরুতর অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। খানপুর এলাকায় পৌঁছানোর পর শিশুটির মৃত্যু হলে স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সসহ লাশ ফিরিয়ে নিয়ে আবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, শিশুর লাশ হাসপাতালে ফেরার পরই মোটরসাইকেলে আসা একদল যুবক ডাক্তারদের ওপর চড়াও হয়।
সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. আবদুল আজিজ বলেন, “শিশুটির মাথার খুলি ভেঙে মগজ বের হয়ে গিয়েছিল। উপজেলা পর্যায়ে এমন রোগীর চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে দ্রুত রেফার করা হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরই একদল লোক এসে আমার ওপর হামলা চালায়।”
উপজেলা জামায়াত আমির মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, “চিকিৎসককে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে আমিও আক্রান্ত হই। এরপর আমাকে রক্ষায় এগিয়ে আসে গাড়িচালক নুরুজ্জামান, সেও আহত হয়।”
হামলার অভিযোগে নাম উল্লেখ থাকা আব্দুল্লাহ তরফদার বলেন, “বাচ্চার অবস্থা গুরুতর দেখে আমরা ডাক্তারদের অনুরোধ করেছিলাম চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা রেফার করেন। এতে পথে শিশুটি মারা যায়। কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন উত্তেজিত হয়ে ডাক্তারদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। তবে আমরা মারামারি করিনি, বরং ঠেকানোর চেষ্টা করেছি।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, “জরুরি বিভাগে ঢুকে হামলার ঘটনায় চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। চিকিৎসকরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত এজাহার দেওয়া হয়েছে।”
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির জানান, “হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
আপনার মতামত লিখুন :